
সন্তানরা মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই সন্তানদের মধুর মুহূর্তগুলো স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তোলেন। অথচ অনেক ফকিহ ও বিজ্ঞ আলেমের মতে, অহেতুক ছবি তোলা ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে একদিকে যেমন শরিয়তের সীমা লঙ্ঘিত হয়, অন্যদিকে এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার কারণে শিশুদের বদনজরের ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়া হয়। ফলে শিশুরা শারীরিক বা মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।
বদনজর কোনো কুসংস্কার নয়। বাস্তবেই মানুষের কুদৃষ্টি দ্বারা ক্ষতি হয়। নবী-রাসুলরাও এ বিষয়ে সতর্ক করতেন।
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “সে [ইয়াকুব (আ.)] বলল, ‘হে আমার পুত্ররা! (মিসরে প্রবেশের সময়) সবাই একই প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ কোরো না, ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কোনো বিধান থেকে আমি তোমাদের রক্ষা করতে পারি না। বিধান কেবল আল্লাহরই। তাঁর ওপরই আমি ভরসা করি এবং তাঁরই ওপর ভরসা করা উচিত ভরসাকারীদের। ” (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৬৭)
তাফসিরবিদদের মতে, ইয়াকুব (আ.) তাঁর পুত্রদের বদনজর থেকে রক্ষার উদ্দেশে এ পরামর্শ দিয়েছিলেন, কারণ তাঁর সন্তানরা ছিল সুদর্শন। তিনি শঙ্কা করেছিলেন, একত্রে প্রবেশ করলে কেউ তাদের প্রতি কুদৃষ্টি দিতে পারে।
হাদিসেও বদনজরের বাস্তবতা বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমির বিন রাবিআহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, বদনজর সত্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৬)। তাই নিজেদের সন্তান-সন্ততিসহ এমন বিষয়গুলো প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া আবশ্যক।
এবং কারো কোনো সম্পদ দেখলে ‘মাশাআল্লাহ’, ‘বারাকাল্লাহ’ ইত্যাদি বলা আবশ্যক। আবু উমামা ইবনে সাহল (রা.) থেকে বর্ণিত, আমির ইবনে রবিআ সাহল ইবনে হানিফকে গোসল করতে দেখে বলেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমনকি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। (আমিরের) এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সাহল সেখানে লুটিয়ে পড়ল।
এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি সাহল ইবনে হুনাইপের (বা হানিফ) কিছু খবর রাখেন কি? আল্লাহর কসম! সে মাথা উঠাতে পারছে না। তখন রাসুল (সা.) বলেন, তুমি কি মনে করছ যে তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে? লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইবনে রবিআ (বদনজর দিয়েছে)।
অতঃপর রাসুল (সা.) আমির ইবনে রবিআকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকে বলেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি ‘বারাকাল্লাহ’ কেন বললে না? এইবার তুমি তার জন্য গোসল করো। অতএব, আমির হাত-মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ওই পানি একটি পাত্রে জমা করল। সেই পানি সাহলের দেহে ঢেলে দেওয়া হলো। অতঃপর সাহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সবার সঙ্গে রওনা হলো।
(মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৬৮৯)
তাই শিশুদের ছবি তোলা ও প্রচারে সতর্কতা জরুরি। মহান আল্লাহ সবার আদরের সন্তানকে সব ধরনের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন। আমিন।